দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি যে জরিপ চালিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সেবা খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা।
জরিপে এরপরই রয়েছে পাসপোর্ট, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বিচারিক সেবা, ভূমি, শিক্ষা এবং সরকারি স্বাস্থ্য সেবা।
সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ১৫টি খাতে দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে টিআইবির এই খানা জরিপে।
গ্রাম এবং শহর মিলিয়ে ১৫,০০০ হাজার খানা বা একই বাড়িতে বসবাসকারীদের ওপর এই জরিপ চালানো হয়।
ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ৭২.৫% পুলিশের হাতে কোন না কোন ধরনের দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
এর মধ্যে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষরা পুলিশী দুর্নীতির শিকার বেশি হয়েছেন।
তারা পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে বেশি ঘুষ দিয়েছেন, নানা ধরনের ভয়ভীতির শিকার হয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলার হুমকি দেয়া হয়েছে, বিনা কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তারা জিডি করতে গিয়ে থানা কর্মকর্তার অনীহার শিকার হয়েছেন।
জরিপ অনুযায়ী, সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বিভাগ হচ্ছে থানা পুলিশ, এরপর রয়েছে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো জনগণের কাছ থেকে এই মেয়াদে ২১৬৬ কোটি টাকা ঘুষ হিসেবে আদায় করেছে বলে টিইবির এক হিসেব বলছে।
আরেকটি দিক বেরিয়ে এসেছে এই জরিপ থেকে।
তা হলো কম আয়ের মানুষ বেশি পুলিশ বিভাগের দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, যাদের আয় মাসিক ১৬০০০ টাকার কম, তাদের বার্ষিক আয়ের ২.৪১% অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।
অন্যদিকে, যাদের আয় বেশি তারা ঘুষ দিতে বাধ্য হন তুলনামূলকভাবে কম।
একইভাবে স্বল্প শিক্ষিতরাও বেশি ঘুষ দিতে বাধ্য হয়।
এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি দমন বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার কথা যাদের, তাদের মধ্যে দুর্নীতির ব্যাপকতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
“আমাদের জন্য আরো উৎকণ্ঠার বিষয় হচ্ছে যে, ৮৯% মানুষ বলেছে যে তারা ঘুষ দিতে বাধ্য। কারণ ঘুষ না দিলে তারা সেবা পাবেন না,” তিনি বলেন, “যারা ঘুষ দিতে বাধ্য হয় তারা এটাকে জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে মেনে নেওয়ার মতো অবস্থায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।”
টিআইবির এই খানা জরিপ সম্পর্কে পুলিশের বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।