ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬ ধারায় তদন্তের অবারিত ক্ষমতা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় হাইকোর্ট তদন্তে কী কী প্রক্রিয়া অনুসরণীয় তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪৪ ধারায় থানায় জেনারেল ডায়েরি রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে। তদুপরি ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ও ১৫৫ ধারায় থানায় জিডি রক্ষণ করার নির্দেশনা আছে। ওই তিনটি ধারার অনুসরণে পিআরবির ৩৭৭ নম্বর প্রবিধিতে এক বিশাল নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় পিআরবির ২৪৪ বিধিতে পুলিশের জন্য সব ধর্তব্য অপরাধে থানায় এফআইআর (এজাহার) গ্রহণ বাধ্যতামূলক। এবং সেই এজাহারের সারাংশ জিডিতে নোট করতে বলা হয়েছে। অথচ মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ধর্তব্য অপরাধের বেশির ভাগই থানায় জিডিতে নোট করে নিষ্পত্তি করা হয়। ফলে অভিযোগটির জিডিতেই মৃত্যু ঘটে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় এজাহার রুজু না হলে কার্যবিধির ১৫৬ ধারা মতে, তদন্তের সুযোগ সৃষ্টি হয় না বা বৈধ এখতিয়ার আসে না। ফলে ধর্তব্য অপরাধে জিডি করে নিষ্পত্তি করা অবৈধ এবং সরাসরি আইন লঙ্ঘন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজাহারের পরিবর্তে জিডি করে কত যে ধর্তব্য অপরাধকে হত্যা করা হয়েছে তার সংখ্যা বিশাল এবং এটা নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ আছে। তবে এই জিডি করার চর্চা বহু পুরনো এবং এই ব্যাধিটি পুরনো হলেও দুরারোগ্য নয়। বহু কারণে পুলিশ এটা করে থাকে, যার প্রধান কারণ—ক) থানায় সব মামলা রেকর্ড হলে সেই ওসি অসফল বলে চিহ্নিত হয়ে পদ হারানোর শঙ্কায় পড়বেন; খ) অধিক মামলা রুজু হলে সেগুলো তদন্ত, আসামি গ্রেপ্তার, চার্জশিট দেওয়া, কোর্টে সাক্ষী হাজির করা ইত্যাদি অনেক ঝকমারি; গ) পুলিশ সুপার ও ডিসিরা তাঁদের অধিক্ষেত্রে অধিক মামলা রুজু হলে মাসিক বা বার্ষিক অপরাধ সভায় জবাবদিহির মুখে পড়েন; ঘ) ডাকাতি, বড় ছিনতাই, আলোড়িত হত্যাকাণ্ড, অপহরণের ঘটনা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের খুবই বিব্রত করে এবং তাঁদের মূল্যবান অবস্থানটি নড়বড়ে করে ফেলে এবং ঙ) হাল সময়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সফল উদ্ঘাটনের চেয়ে অফিসারদের ওপরের ও বাইরের সংযোগ ও সেবার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়; চ) থানা ও মাঠপর্যায়ের বেশির ভাগ অফিসারের পদায়ন যোগাযোগ ও সেবাদানের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, স্বাভাবিক নিয়মে পদায়ন খুবই কম হয়।
১৯ মার্চ সব দৈনিকে অপহৃত ব্যবসায়ী সজলের ফিরে আসার সংবাদটি গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছে, সঙ্গে অপহরণের সম্ভাব্য কারণও, যেমন—ক) ব্যবসায়ের পার্টনারের সঙ্গে ১০ কোটি টাকা পাওনার বিরোধ এবং খ) এক সেনা কর্মকর্তার বোনের বিয়ের জন্য টাকা গ্রহণ ও অসফল হওয়া; গ) দ্বিতীয় বিয়ে, ছাড়াছাড়ি, স্ত্রীর হুমকি ইত্যাদি।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে অপহৃতের ভাষ্যে অপহরণকারী দলটি র্যাব উত্তরা ব্যাটালিয়নের সদস্য। অতিথি সৎকারের যে বিবরণ সজল দিয়েছে, তাতে বিশ্বাসের পাল্লাই ভারী হয়। ২০ মার্চ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, ঢাকা শহরেই গত এক মাসে ২০টি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যা ভয়াবহ। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ, যেমন—ছিনতাই, ঘরে ঢুকে মোটরসাইকেল ছিনতাই, সঙ্গে বাধা দেওয়ায় হত্যা। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব অপহরণ ও ছিনতাইকারী কি কোনো সন্ত্রাসীচক্র? অপরাধের ধরন সেই পিস্তল, হাতকড়া, ওয়্যারলেস ও মাইক্রোবাস ব্যবহার। ঘটনাকালে ডিবি পরিচয়দান। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে খোদ পুলিশই হতবিহ্বল। এ ধরনের অপরাধের কত অংশ আসলের, কত অংশ অপরাধীদের, তা বের করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। মহানগর ডিবির যুগ্ম কমিশনারের মতে, ডিবির সদস্যরা অভিযানে গেলে ‘ডিবি জ্যাকেট’ পরা বাধ্যতামূলক এবং ঊর্ধ্বতন কর্তাদের অনুমতি নিতে হয়। অনেক সময় ডিবি টিম নিয়ম মানে না। ডিবির সদস্যরা তো ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য অভিযান চালান না, তাহলে নিয়ম-বিধি মানতে বাধা কোথায়? গোপন সংবাদ সংগ্রহকালে জ্যাকেট ছাড়া যাওয়া চলে; কিন্তু তথ্যনির্ভর অভিযানকালে নিয়ম অমান্য করা অসৎ উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত বহন করে না কি?
আবারও ব্যবসায়ী সজলের কাহিনিতে আসি। পাঁচ-ছয় দিন যথাযথ অতিথি আপ্যায়নের পর পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় তুমুল ঝড় বয়ে যাওয়ার কারণে সজলের পাপমোচন ঘটে। অপহরণকারীচক্র তাকে কষ্ট করে রায়পুরা নিয়ে দুই হাজার টাকা দিয়ে ছেড়ে দেয় এটা প্রমাণ করতে যে অপহরণকারীরা ঢাকার বাইরের। চার-পাঁচ বছর আগে র্যাব ভীষণভাবে অনিয়ন্ত্রিত ছিল। বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে। র্যাবের বর্তমান প্রধান দায়িত্ব গ্রহণের পর র্যাবকে একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে পরিচালনায় সচেষ্ট আছেন। ফলে মাঠপর্যায়ে হালে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের সংবাদ খুব একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। তিনি নিজেও একজন সফল, দক্ষ ও শৃঙ্খলাপরায়ণ অফিসার। জাতিসংঘ মিশন ও নিউ ইয়র্কের সদর দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে কয়েকবার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। সব দিক বিবেচনায় র্যাব নিজেরাই একটি তদন্ত পরিচালনা করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে দায়ীদের চিহ্নিত করে ত্বরিত ব্যবস্থা নেবে আশা করা যায়।
সজল অপহরণসংক্রান্ত ভাটারা থানা পুলিশ ত্বরিত আইনিব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখে। সজলের মা থানা থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা-আশ্বাস—কিছুই পাননি। অথচ এটি ভয়ংকর ধর্তব্য অপরাধ, পুলিশের ঘুম ছুটে যাওয়ার কথা। পত্রপত্রিকায় সংবাদ, সম্পাদকীয় ও চতুর্মুখী চাপে মেহেরবানি করে একটি জিডি করে দায়িত্ব শেষ করে। উদ্ধারের কোনো তৎপরতা গ্রহণ করা দরকার মনে করেনি। ১৮ মার্চ সজল ফিরে এলে সেই বাসায় প্রহরা বসানো হয়েছে। কিন্তু সজলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কি না, করলে কী তথ্য পেল তা জানা যায়নি।
সংক্ষেপে বলা যায়, র্যাব, পুলিশ, ডিবি বা অন্য কোনো বাহিনী—কাউকেই এ ধরনের এখতিয়ারবহির্ভূত বা অবৈধ গ্রেপ্তার বা অপহরণে উৎসাহিত করা উচিত নয়। এতে ক্রমে ক্রমে বাহিনীগুলোর একটি অংশ অপ্রতিরোধ্য দৈত্যে পরিণত হবে এবং মুরব্বিদেরই হজম করে ফেলবে।
পুলিশ, র্যাব, ডিবিকে অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থাগুলো নেওয়া যায়।
ক) সাদা পোশাকে অভিযান চালানো বন্ধ করা; খ) ডিবি অভিযানকালে জ্যাকেট পরবে এবং পোশাকধারী পুলিশ সঙ্গে রাখবে, অধিক্ষেত্রের থানাকে অভিযান চলাকালে অবহিত করবে এবং গ) র্যাব অভিযান বা গ্রেপ্তারকালে পোশাক পরবে এবং থানাকে অবহিত করবে; ঘ) অভিযানকারী সব দল মাইক্রোবাস ব্যবহার না করে জিপ, পিকআপ ব্যবহার করা যায় কি না ভেবে দেখবে। এতে প্রাইভেট গ্রেপ্তার বা অপহরণ কমে আসবে।
অন্যদিকে র্যাব ২-এর একটি দল অভিযোগের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার কালাই গ্রামের সেলিম মোল্লার বাড়িতে হানা দিয়ে অপহৃত ও আটককৃত ব্যবসায়ী জাফর ইকবাল ও মুরাদ গাজীকে উদ্ধার করে। র্যাব দলটি সেলিম মোল্লার বাড়ি থেকে সেলিম মোল্লা, তাঁর ছেলে রাজিবুলসহ অপহরণচক্রের ১০ জন সদস্যকে আটক করে এবং আগ্নেয়াস্ত্র, দেশি অস্ত্র ও আদায়কৃত মুক্তিপণের দুই লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধারের পর মামলা রুজু করে তদন্তভার গ্রহণ করেছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১৬ মার্চ শুক্রবার সকালে ফার্মগেট এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে বলপূর্বক মাইক্রোবাসে উঠিয়ে ওই সেলিম মোল্লার বাড়িতে নিয়ে আটক রাখা হয়। একদফা মুক্তিপণ আদায় করে আরো ৪৫ লাখ টাকা চায়। ফলে র্যাবের এই সফল অভিযান। উল্লেখ্য, অপহরণকারীচক্রের হোতা সেলিম মোল্লা হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। পেশায় গণপূর্ত বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়েও বিশাল সম্পত্তির মালিক, সঙ্গে এলাকায় প্রচণ্ড দাপটশালী। র্যাব ২-এর সফল ও ত্বরিত অভিযান বাহিনীর দক্ষতা, আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে। যথাযোগ্য প্রশংসা তাদের প্রাপ্য। হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলা এবং সারা দেশে ব্লগার, পুরোহিত, পাদ্রিদের যেভাবে হত্যা করা হচ্ছিল, র্যাবের বর্তমান ডিজির পরিচালনায় র্যাব খুব দ্রুত সময়ে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালিয়ে তাদের নিষ্ক্রিয় করেছে, যা দেশবাসীকে ভীষণভাবে আশ্বস্ত করেছে। ফলে র্যাব জনমনে আস্থার জায়গা সৃষ্টি করতে পেরেছে। তাই র্যাবকে অবশ্যই জনগণের আস্থা ও অর্জিত সম্মান ধরে রাখতে হবে।
এদিকে নরসিংদী জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে ১৭ মার্চ কালের কণ্ঠ’র প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে গুরুতর অভিযোগ। সংবাদ শিরোনামটি নিম্নরূপ—
‘পুলিশ ধরে নেওয়ার পর ছয় নেতা নিখোঁজ’, ‘রূপ মিয়াদের পুলিশ খাইয়া ফালাইছে : এমপি রাজি উদ্দিন রাজু’। এটি কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২৬ মে ২০১৭ সালে নরসিংদীর রায়পুরা থানা পুলিশ বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের চার নেতা আজিজুল হক, রূপ মিয়া, হাবিবুর রহমান ও জাকির হোসেনকে ধরে নিয়ে যেতে চায়। এলাকাবাসী বাধা দিলে পুলিশ গুলি চালায়। ফলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে পড়লে নরসিংদী পুলিশ লাইনস থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ওই চার ব্যক্তিকে শত শত মানুষের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। সেদিন থেকে তাঁদের কোনো খোঁজ নেই। এরপর পুলিশ আটক করে সোহেল ও বজলুর রহমানকে। তাঁরাও সেদিন থেকে গুম। গ্রামবাসী এ ব্যাপারে এসআই শাখাওয়াত হোসেন ও আজহারুল ইসলামকে দায়ী করে। আওয়ামী লীগে নব্য যোগদানকারী সিরাজুল হক চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে পুলিশ এসব গুম করেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে। অভিযোগ উঠেছে রায়পুরার সাবেক ওসি আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও। নরসিংদী জেলা বারের সভাপতি আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া বলেন, ‘বাঁশগাড়ির চার নেতাকে গুম করার বিষয়ে স্বজনরা আমাদের কাছে এলে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার আমেনা বেগমের কাছে গিয়েছিলাম। এসপি বলেন, থানা পুলিশ বা ডিবি কেউ গ্রেপ্তার করেনি।’
বিগত দুই বছর নরসিংদী জেলা পুলিশ ও ডিবির বিরুদ্ধে অবৈধ গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম ও হত্যার সংবাদ পত্রিকায় এসেছে। অথচ জেলা পুলিশ সুপার জেলা বারের সভাপতির কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে একবাক্যে না করে দিয়ে জলে সাঁতার কাটা হাঁসের মতো পালক ঝাড়া দিয়ে নির্বিকার রইলেন। এটা দায়িত্বশীল আচরণ নয়। এত গুরুতর অভিযোগের জন্য মামলা নিয়ে কার্যত গুম ব্যক্তিদের উদ্ধারের উদ্যোগ প্রত্যাশিত ছিল। অভিযোগ যদি তিনি অসত্য মনে করতেন, সেটাও নিখোঁজ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারতেন। ১০ মাস ধরে এসব মানুষ নেই, এটা দেখার দায়িত্ব কার? রায়পুরা থানার নিলক্ষা চরের বড় বড় দাঙ্গার কেমিস্ট্রি, হেতু, রহস্য উদ্ঘাটন করে দাঙ্গা বন্ধের স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রত্যাশিত ছিল।
যা হোক, এদিকে আমাদের উল্লিখিত এসআই শাখাওয়াত ও এসআই আজাহার গত সেপ্টেম্বরে ২০ জনের একটি দল নিয়ে রায়পুরা থানার নিলক্ষা ইউনিয়নের ৪৯ জন গরু ব্যাপারীর গরুসহ দুটি ট্রলার আটক করেন, ৭০ লাখ টাকা ডাকাতি করে উল্টো গরু ব্যাপারীদের সন্ত্রাসী বলে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান দেন। ১৩ দিন পর ব্যাপারীরা জামিনে এসে অভিযোগ করেন। আবার গত ২৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়া প্রবাসী সোহেল মিয়া চারজন আত্মীয়সহ ভাড়া গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে নরসিংদীর সাহেপ্রতাব এলাকার বিএল সিএনজি পাম্পে এলে ডিবি পরিচয়ে সাতজনের একটি দল ওই প্রবাসীর দুটি স্বর্ণের বার, স্বর্ণালংকার, মোবাইলসহ ১৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ডাকাতি করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নরসিংদীর আসল ডিবি ওই পাম্পের সিসি ক্যামেরার রেকর্ডে ওই এসআই সাখাওয়াত ও আজহারুলের দলকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে মামলা নেয়। ওই মামলায় তাঁরা এখন হাজতে। নরসিংদীর তৎকালীন পুলিশ সুপারের উদাসীনতার জন্য পুলিশ সরাসরি অপরাধে জড়িত হয় বলে স্থানীয়রা বিশ্বাস করে। অভিযোগ আছে, তস্কর পুলিশদের প্রতি তাঁর নমনীয় আচরণের।
নরসিংদীর অনিয়ন্ত্রিত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও লাগামহীন কিছুসংখ্যক পুলিশ সদস্যের তস্করবৃত্তির সময় পুলিশ সুপারের ফেসবুক পোস্টে দেখা যায়, তিনি জেলা সদরের বাইরে এক মাননীয় সংসদ সদস্যের জন্মদিনে একসঙ্গে কেক কাটছেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত করা যেতে পারে। এটা হচ্ছে আমাদের কোনো কোনো জেলার আইন-শৃঙ্খলার হালচিত্র।
হতাশ না হয়ে সবাই একযোগে কাজ করলে পুলিশের দায়িত্বরতরা জনগণকে একটি সুন্দর ও নিরাপদ পরিস্থিতি উপহার দিতে পারবেন। কারণ তাঁদের সেই দক্ষতা ও যোগ্যতা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু আগ্রহ ও সদিচ্ছার এবং নেতৃত্বের।
সব শেষে হাছন রাজার গানের কথাগুলো আবারও স্মরণ করতে হয়। আমরা জীবনের অনেকটা অংশ পাড়ি দিয়ে ফেলেছি; এখন তাই কেন এত জিঘাংসা, লোভ, সম্পদ অর্জনের তাড়া, ক্ষমতার মদমত্ততা ও নিষ্ঠুরতা। সবারই সংযত হওয়া দরকার এখনই, এই মুহূর্ত থেকে।