গ্রেপ্তার বাণিজ্য, মাদক দিয়ে হয়রানি, হুমকি-ধমকি, শারীরিক নির্যাতনসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন বগুড়ার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। গত এক মাসে এ ধরনের কমপক্ষে ১০টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।
১
২০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষকে মাদক দিয়ে চালান দেওয়া এবং ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে বগুড়া সদর থানার এএসআই কামরুলের বিরুদ্ধে। তাঁকে ও তাঁর সোর্স নাইমকে গণপিটুনি দেয় গ্রামবাসী।
সদরের ঘোলাগাড়ি গ্রামের এ ঘটনায় দুজনকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
২
২০ জুলাই দাদন ব্যবসায়ী হযরতের হয়ে তিনমাথা রেলগেট থেকে সোহেলকে বাড়িতে না পেয়ে তার বাবা নুরুল ইসলামকে (৬৫) আটক করে স্টেডিয়াম ফাঁড়িতে নিয়ে যান এসআই আব্দুল আলিম। বৃদ্ধকে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে না দিয়ে সারা দিন মানসিক নির্যাতন করা হয় দুই লাখ টাকার জন্য। শেষ পর্যন্ত ছেলেকে ফাঁড়িতে হাজির করে দেওয়ার শর্তে বিকেলে তাঁকে ফাঁড়ি থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
৩
১৮ জুলাই সদর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক শেখ ফরিদ মাদক কারবার ছেড়ে দেওয়া রিনাকে আটক করেন। তাকে ফাঁড়িতে আটকে রেখে ক্রসফায়ারের ভয় দেখান। এরপর তার বাড়িতে ফাঁড়ির সোর্স (চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল) মান্নানকে পাঠিয়ে সোনার গয়না নিয়ে এসে তা দোকানে বন্ধক রেখে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরে রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর আগেও সদর থানার এসআই শাহজাহান ও জাহিদুল তাকে তার বাড়িতে গিয়ে আটক করেন। দুটি গরু বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা নেন।
৪
১৭ জুলাই জেলা জজ আদালতে মাদক মামলার জামিন শুনানিকালে এক নারী জেলা জজ নরেশ চন্দ্র সরকারকে জানান, সদর থানার এসআই শাহজাহান স্বামীকে না পেয়ে তাঁকে থানায় নিয়ে আসেন। বাড়িতে তাঁর সাত মাসের শিশুকন্যা থাকলেও সঙ্গে নিতে দেননি। এরপর তাঁর স্বামী (ইউপি সদস্য) হান্নানকে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এসআই শাহজাহান মাদক কারবার ছেড়ে দেওয়া তিনমাথা রেলগেটের রিনার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা এবং বাদুরতলা চকসূত্রাপুরের জেসমিন আক্তারকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা নেন।
৫
১৭ জুলাই রাতে সদর থানার এএসআই শাহাদৎ গাঁজা সেবনের অভিযোগে কর্ণপুর গ্রামের ভ্যানচালক এমদাদুলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা চান। ১৫ হাজার টাকায় সামান্য পরিমাণ গাঁজা দিয়ে চালান দেওয়ার কথা বলে রাতেই সাত হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরদিন বুধবার ছেলে রুবেল বাকি আট হাজার টাকার জন্য দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে ধরনা দেন। জানাজানি হলে এমদাদুলকে ১৫১ ধারায় চালান দেওয়া হয়।
৬
ধুনট থানার পরিদর্শকের বিরুদ্ধে বাদিনীর মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ১৭ জুলাই পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বাড়িতে হামলা করার একটি মামলা ধুনট থানায় নিয়ে গেলে বাদী গোলাম আকন্দের মেয়ে গোলাপি খাতুনকে (২৪) অনৈতিক প্রস্তাব দেন থানার পরিদর্শক খান মো. এরফান। রাজি না হলে মামলার কপি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে তাঁর মুখে নিক্ষেপ করেন।
৭
১৬ জুলাই মালগ্রামের বালু ব্যবসায়ী রব্বানীকে আটক করেন এসআই আব্দুল আলিম। রাতে তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা চান। পরদিন ৫০ হাজার টাকায় রফা হলে তাঁকে মাদক সেবনের অভিযোগে আদালতে চালান দেওয়া হয়। এলাকাবাসী জানায়, মাদক সেবন দূরের কথা, রব্বানী ধূমপানও করেন না।
৮
২০ জুন বিকেলে মোস্তাফিজার রহমান কিরণকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। বনানী ফাঁড়ির মধ্যে গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পরিদর্শক তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তাঁর কাছে ঘুষ চাওয়া হয়। টাকা না পেয়ে গত মের ডাকাতিচেষ্টা মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় গত ১ জুলাই নির্যাতিতের মা পারভীন আক্তার আদালতে মামলা করেন।
৯
১৮ জুন বিকেলে শহরের মালগ্রাম মধ্যপাড়ার আল-আমিন ও সুমনকে আটক করেন শাজাহানপুর থানার এসআই বাবর। তাঁদের থানায় না নিয়ে মহাসড়কের পাশে একটি সিএনজি পাম্পে রেখে মারধর করার পর পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। অন্যথায় গাঁজা দিয়ে চালান দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
১০
শহরের স্টেডিয়াম ফাঁড়ির এসআই আব্দুল আলিম ১৩ জুন মালগ্রামের নির্মাণ শ্রমিক সোহাগকে আটক করে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা না পেয়ে তাঁকে ২১ পিস ইয়াবা দিয়ে চালান দিয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে সোহাগের বড় ভাই সাগর মৌখিক অভিযোগ করায় ১৯ জুন তাঁকেও আটক করে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
মাঠপর্যায়ের কিছু পুলিশ সদস্য নানা রকম অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ আসছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত করা হচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ করে দেওয়া হয়েছে। মকবুল হোসেন বগুড়ার এসপি (ভারপ্রাপ্ত)