ধরে এনে মানুষ পেটানো নতুন ঘটনা নয় এসআই জাহিদের। এর আগে তিনি পল্লবী থানায় থাকাকালীন জনি নামের এক ছেলেকে ধরে এনে থানায় বেধড়ক পিটিয়েছিলেন। জনি এসআই জাহিদের নির্যাতনে মারা যান বলে অভিযোগ ওঠে। জাহিদ পল্লবী থানায় থাকাকালীন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিয়েছেন। কেউ চাঁদা না দিলেই তাকে নির্যাতন করেছেন।
বুধবার জাহিদকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পর ভুক্তভোগীরা রাইজিংবিডির কাছে এসব কথা জানিয়েছেন।
পল্লবী থানা সূত্রে জানা যায়, জাহিদ গত ৯ ফেব্রুয়ারি জনি নামের এক বিহারি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। জাহিদ তখন পল্লবী থানায় কর্মরত ছিলেন। ওই ঘটনার পরে পল্লবী থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। জনি হত্যার তদন্ত এখনো চলছে, এর মধ্যেই তিনি মিরপুর মডেল থানায় যোগ দেন।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের ইরানি ক্যাম্পে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে জনি, তার ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন, ফয়সাল, রাজন, টিটুসহ আটজনকে ধরে নিয়ে যায় এসআই জাহিদের নেতৃত্বে পল্লবী থানা পুলিশের একটি দল। এরপর জনি, রকিসহ অন্যদের থানায় বেধড়ক মারধর করেন এসআই জাহিদ। পরদিন সকালে জনি মারা যান।
জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ বলেন, বিয়েবাড়িতে সুমন নামের পুলিশের এক সোর্সকে চড় মেরেছিলেন জনি। সুমন মদ খেয়ে মাতলামি করছিলেন। সেই ঘটনার জের ধরে সুমন এসআই জাহিদকে ডেকে এনে জনিকে ধরিয়ে দেন।
ইমতিয়াজ আরো বলেন, ‘জেলে গিয়া সাইফুল ও দুর্জয় নামে এই এলাকার আরো দুজনের সঙ্গে দেখা হয়। ওদেরও পা পিটাইয়া ভাঙছে জাহিদ স্যারে।’
পল্লবী থানার এসআই শোভন কুমার বলেন, ওই ঘটনায় এক এসআই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেখানে বলা হয়, বিয়েবাড়িতে মারামারির ঘটনায় জনিসহ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। পরে জনি মারা যান। জনির মা খুরশিদা আক্তার এসআই জাহিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি এজাহার দিলে সেটি পুলিশের সম্পূরক এজাহার হিসেবে গৃহীত হয়। ওই মামলার তদন্ত এখনো চলছে।
জনি হত্যার পর এসআই জাহিদকে প্রত্যাহার করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু কোনো কমিটিই এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
গত জানুয়ারিতে জাভেদ হোসেন নামের আরেক যুবকের পায়ে গুলি করার অভিযোগ ওঠে এসআই জাহিদের বিরুদ্ধে। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে জাভেদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া জাহিদের বিরুদ্ধে চাঁদার দাবিতে ধরে এনে নির্যাতন, মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়াসহ বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জাভেদের এক আত্মীয় রাইজিংবিডিকে ফোন করে জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাভেদ তাদের বলেছিলেন যে কুর্মিটোলা ক্যাম্প থেকে তাকে গাড়িতে তোলেন এসআই জাহিদ। গাড়িতে তুলে বলেন, ‘রংধনু ক্লাবটা দেখিয়ে দিবি।’ কিছুদূর নিয়ে যাওয়ার পরেই কালো কাপড় দিয়ে জাভেদের চোখ বাঁধা হয়। সিরামিক এলাকায় নিয়ে তার পায়ে গুলি করে পুলিশ।
পল্লবী থানার বাসিন্দা লোকমান হোসেন অভিযোগ করেন, এসআই জাহিদের হাতে অনেক লোক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। টাকা চেয়ে না পেলে তার অবস্থা খারাপ করে দিতেন এসআই জাহিদ। লোকমানের কাছেও টাকা চেয়েছিলেন জাহিদ। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় বাসায় এসে তার বউ-বাচ্চাকে শাসিয়ে যান। অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে জাহিদকে দিয়েছেন তিনি।
কত টাকা দিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা না হয় না-ই বললাম।
এ বিষয়ে পুলিশের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, জনির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এসে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে জাহিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর জাভেদের বিষয়টি তিনি মনে করতে পারছেন না বলে জানান।